রমযান মাস

on Tuesday, July 31, 2012

রমযান মাস অন্যান্য আরবি মাসের সরদার এবং অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। আরবি ১২ মাসের মধ্য ৯ম মাস হল পবিত্র মাহে রমযান মাস| ছিল। রমযান আরবি শব্দ। রমযান শব্দের অর্থ দহন। আল্লাহর বিশেষ করুণা এবং দয়ার অপার ফজিলত ও সুযোগের মাস এই মাহে রমযান। এগারটি মাসের পাপ ও খারাপ কাজ থেকে মুক্তি পাওয়ার অপূর্ব সুযোগ এই পবিত্র রমযান মাসে। পাপী তাপী সব মানুষের জন্য চিরস্থায়ী মুক্তি ও এক অনাবিল শান্তির বার্তা নিয়ে প্রতি বছরই মাহে রমযান আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। কিন্তু প্রত্যেক বছরই এর আহবান চিরন্তন। এর আবেদনের কোন সীমা নেই। ইবাদাত বন্দেগীর তাৎপর্য অনেক এ মাসে।
এ মাসেই প্রিয় রাসূল (সা.)-এর ওপর আল্লাহ নাযিল করেন মহাগ্রন্থ আল কুরআন । আল্লাহ এ সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন : ‘রমযান হচ্ছে সেই মাস, যেই মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়।’ একটি মর্যাদাপূর্ণ মাস রমযান মাস। এই মাস আগমনের পূর্বেই রাসূল (সা.) প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন এই বলে : ‘হে আল্লাহ আমাদের ওপর রজব ও শা’বানের সকল রহমত দান করুন এবং রমযান মাস পর্যন্ত অব্যহত রাখুন।
রমযান মাস ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ মাস হওয়াতেই রাসূল (সা.) আল্লাহর নিকট হৃদয়াবেগে প্রার্থনা করেছেন। এই মাস অধিক এবাদত করার জন্য একটি মাস। রাসূল (সা.) তার সাহাবীদের রমযান মাসে অধিক পরিমাণে এবাদত করার উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি নিজেও অন্য মাসের তুলনায় রমযান মাসে অধিক পরিমাণ আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকতেন। এ মাসের অধিক গুরুত্ব রয়েছে। যারা এমন একটি মাসে নিজেকে পাপমুক্ত ও আল্লাহ তাআলার খাটি বান্দা হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে ব্যর্থ হবে তারা মূলত অলস ও হতভাগা| রাসূল (সা.) ঐ সকল অলস ও হতভাগা সম্পর্কে বলেছেন “যারা রমযান মাস পেলো কিন্তু নিজেদের পাপমুক্ত করতে ব্যর্থ হল তারা ধ্বংস হোক|” ইসলামের মৌলিক ইবাদাতের মধ্যে রোজা অন্যতম। আর এ রোজা পবিত্র মাহে রমযান মাসেই প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরয করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার ”| এ আয়াত থেকে প্রমাণ করে আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও রোজা ফরয ছিল|
এটা এমন এক বরকতময় মাস যে, এর ১ম দশ দিন আল্লাহর রহমতের ঝর্ণা ধারায় পরিপূর্ণ। ২য় দশ দিন ক্ষমা ও মার্জনার জন্য নির্দিষ্ট এবং শেষ দশ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য নির্ধারিত। আর যে ব্যক্তি এই মাসে নিজের অধীনস্ত মানুষদের শ্রম ও মেহনত হালকা করে দেবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম হতে মুক্তিদান করবেন।
রমযান মাসের এবাদত অন্যান্য সময়ের এবাদতের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। মানুষ সারাদিন রোজা রেখে না খেয়ে থাকে। তার সামনে খাবার ও পানীয় থাকে অনেক, সে ইচ্ছে করলেই তা নির্জনে খেতে পারে, অথচ সে তা খায় না। কারণ হল, সে মহান আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে। আর তার এই ভয়টাই তাকে পরবর্তীতে সব অন্যায়, দুর্নীতিমূলক ও খারাপ কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আর যে ব্যক্তি এই মাসে কোন ফরয আদায় করবে, সেই ব্যক্তি অন্যান্য সময়ের ৭০টি ফরয ইবাদতের সমান সওয়াব লাভ করবে।
এ মাস ধৈর্য, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সবরের। এর ফলাফল হিসেবে আল্লাহর নিকট থেকে সে জান্নাত লাভ করবে| এটা পরস্পর সৌজন্য ও সৌহার্দ প্রদর্শনের মাস। রমযান মাসে মুমিন বান্দাদের আল্লাহ রিযিক প্রশস্ত করে দেন|
এই মাসেই আছে পবিত্র লাইলাতুল কদর। এর মূল্য হাজার মাস অপেক্ষা ইবাদতের ঊর্ধ্বে। এই সুযোগ লাভ করে জান্নাতি হওয়ার কামনা প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে থাকা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে পবিত্র রমযানের তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন।

0 comments: