নিজস্ব যে কোন রূপ লাভের আশায় ক্ষমতার যে কোন রূপ অপব্যাবহার কেই বলা হয় দুর্নীতি। দুর্নীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রগতির পথে প্রধান অন্তরায়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি খাত দুর্নীতির করাল গ্রাসে নিষ্পেষিত।
শিক্ষা খাত যা আমাদের দুর্নীতি মুক্ত থাকতে শেখাবে সেখানেই আজ দেখতে পাই দুর্নীতির কাল ছায়া। শিক্ষা আজ আর কোন সেবা নয় বরঞ্চ তা আজ পরিনত হয়েছে এক প্রকার বাণিজ্যে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবখানেই আজ দুর্নীতি। ভর্তি থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট গ্রহন পর্যন্ত সকল ছাত্র কে হতে হয় দুর্নীতির শিকার। ভর্তির সময় হয় টাকা নয়তো উপর মহল থেকে টেলিফোন আজ এক স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে যা আমাদের মেধার পূর্ণ বিকাশ ও মূল্যায়ন কে বাধাগ্রস্ত করছে। এরপর ও আছে প্রশ্নপত্র ফাঁস বাণিজ্য। যার ফলে সারা বছর না পরেও শুধু মাত্র টাকার জোরে ধনীর দুলালেরা ভাল ফলাফল করে যাচ্ছে যা আমাদের কে এক পঙ্গু অসহায় যুব সমাজ উপহার দিতে যাচ্ছে। এছাড়াও টাকা দিয়ে পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তন আজ আর কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।
এরপর বলা যায় চিকিৎসা খাতে দুর্নীতির কথা। যে ডাক্তার গণ সেবার ব্রত নিয়ে পাস করে বের হন তারা ডাক্তার হওয়ার পর হয়ে যান কসাই। সরকারি চাকরি নিয়ে শুধুমাত্র তারা তাদের সম্মান বৃদ্ধি করেন। তবে সকল ডাক্তারদের বেলায় অবশ্য এই উদাহরণ প্রযোজ্য নয় আজও কিছু ভাল ডাক্তার এর দেখা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল এ পাওয়া যায় বলেই হয়ত মানবতা নামক বস্তুটি আজও আমাদের মাঝ থেকে উধাও হয়ে যায়নি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের দেখা যায় হাসপাতাল বাদ দিয়ে ব্যাক্তিগত চেম্বার নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে। এছারাও সরকারি হসপিটাল এর ব্রিক্রয় যোগ্য নয় সিল মারা ওষুধ আজ কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসী গুলোতে। যা হয়ত ডাক্তারদের দোষ নয় কিন্তু তাদের অবহেলায় অশিক্ষিত কর্মচারীদের লোভের ফল।
সরকারি কর্মচারীদের ঘুষ গ্রহন আজ যেন আইন পাস করে বৈধ করে দেয়া হয়েছে। যেকোনো সরকারি অফিস এ কাজ করতে গেলেই আজ পয়সা গুনতে হয় যা আমাদের মত দরিদ্র দেশের জন্য এক মূর্তিমান অভিশাপ স্বরূপ। জেলা প্রশাসক এর অফিস থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত আজ ঘুষের করাল গ্রাসে পর্যবসিত।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় বিচারবিভাগে এর পরেই আছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অথচ একটি দেশে দুর্নীতি দূরীকরণে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ২০১০ সালের একটি জন জরিপ অনুযায়ী ৭৯% লোক রাজনৈতিক দলসমূহ কে আরও ৭৯% পুলিশ কে, ৬৮% জনপ্রশাসন কে এবং ৪৩% বিচারবিভাগ কে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিহিত করেছে।
তবে জনগণ এর দুর্ভোগে আজ এর বিরুদ্ধে সোচচার হওয়ায় সরকার স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানো হয় সেই সরিষা আজ ভূতের কবলে। আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন আজ দুর্নীতির কবলে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর উদ্যোগে বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে গঠিত হয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। যা মাত্র ৩০০ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ প্রায় ৫০০০ সদস্যের এক পরিবারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রায় ২০ কোটি জনগনের এই দেশে এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। তারপর ও আছে সরকার ও বিভিন্ন প্রশাসনিক মহল থেকে চাপ যা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে। কিন্তু তবুও এর অগ্রগতি প্রমাণ করে যে বাংলার জনগণ আজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচচার। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দুর্নীতি দূরীকরণে সর্বাধিক প্রয়োজন আজ জনসচেতনতার। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এই লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন এর সাথে পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে। তাই আশা করা যায় যেহেতু দুর্নীতি পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয় সেহেতু একদিন পৃথিবীর সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম দেখতে পাব।
View the Original article
0 comments:
Post a Comment