লক্ষণীয় যে, আরবী একটি প্রাচীনতম ভাষা। এ ভাষা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবীর মাতৃবাষা। তবে আরবের কুরাইশের ভাষা ছিল বিশুদ্ধ আরবী ভাষা। তখন সব অঞ্চলের লোকেরা মক্কার ভাষার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় লাভ করে। বিভিন্ন গোত্রের ভাষাগত ব্যবধান কমতে থাকে। অবশেষে সকল আরবের মাঝে একটি সুদৃঢ় ঐক্য দেখা। ঠিক ঐ সময় আল্লাহ জাহেলী যুগের সকল অত্যাচার ু অনাচার রহিত করতে নাযিল করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেন : আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে ডাকছেন। (ইউনুস : ২৫)
যারা ছিল পরষ্পর শত্রু, কুরআন নাযিলের পর তারা হয়ে গেল মুসলিম ভাই ভাই।
তোমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত রয়েছে। তা তোমরা স্মরণ কর। তোমরা পরষ্পর শত্রু ছিলে, অতপর তিনি তোমাদের অন্তরে ভালবাসা সৃষ্টি করেছেন। ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে পরষ্পর ভাই হয়ে গিয়েছ।
আল-কুরআনুল কারীম ও হাদীসের মর্মার্থ উপলব্ধি করতে হলে আরবী ভাষা শিক্ষা করা আবশ্যক। অর্থাৎ কুরআন ও হাদীসের গুঢ় রহস্য উদঘাটন করতে শেখা আরবী জ্ঞান ব্যতিরেকে সম্ভব নয়। এ জন্যই তো আরবী ভাষা শিক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন_ ”নিশ্চয়ই আমি মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আরবী ভাষায় নাযিল করেছি। ইহা এ জন্য যে, তোমাদের উপলব্ধি করতে সহজ হবে।” (সূরা ইউসুফ ঃ ২)
অনুরূপ ভাবে সূরা আন-নাহলে আল্ল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ”যার দিকে তারা ইঙ্গিত করে তার ভাষা তো আরবী নয় পক্ষান্তরে এ কুরআন হল পরিস্কার আরবী ভাষায়।” কুরআনে কারীম এবং তার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াবলী সম্পর্কে পবিত্র হাদীসেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সুস্পষ্ট নির্দেশ সূচক শব্দ ব্যবহার পূর্বক নবী (সঃ) নির্দেশ করেন- তোমরা মানুষদেরকে ডাকো এবং তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে দ্বীনের ভাষা, ইসলামের ভাষা, সভ্যতার ভাষা, প্রগতির ভাষা এবং পরস্পর সম্পর্ক সমুন্নত রাখার ভাষাও শিক্ষা দাও অর্থাৎ বিশ্বনন্দিত আরবী ভাষা শিক্ষা করার ব্যাপারেও নির্দেশ প্রদান কর। এ জন্যই নবী (সঃ) বলেছেন যে, তোমরা আরবী ভাষা নিজেরা শিক্ষা কর এবং অন্যদেরকেও শিক্ষা দাও।
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কোন জটিল বিষয়ের সমাধান প্রদানে বিশ্বের সকল মনগড়া মতবাদসহ সমসাময়িক বুদ্ধিজীবি মহল যুক্তি দিতে দিতে বুদ্ধির পরিধি শেষ হয়ে যখন অথর্বতা ও নীরবতায় পরিচয় দেয়, ঠিক মহাগ্রন্থ আল কুরআন সে জটিল বিষয়টিরও সর্বোন্নত ও পরিপূর্ণ সমাধান প্রদান করে অনায়াসেই। এ জন্যই তো ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, যে কোন সময়ে, যে কোন মুহুর্তে সে গ্রন্থের প্রতি মনোনিবেশ করা মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজেই ছিলেন একজন আরবী। তাঁর ভাষা হল আরবী। সমস্ত হাদীস গ্রন্থগুলো আরবী। প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থসমূহ যেমন- বুখারী, মুসলিম, সুনানে আবি দাউদ, তিরমিযী, সুনানে নাসাঈ, ইবনে মাজাহসহ দ্বীন ইসলাম শিক্ষার সকল মৌলিক গ্রন্থগুলোই আরবী ভাষায় সংকলিত হয়েছে। এ জন্য কুরআন ও হাদীস নিয়ে গবেষণা করতে গেলেই আরবী ভাষা শিক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
কুরআনে কারীম অবতারণার ভাষা হল আরবী। আরবী ভাষার মধ্যে এটা কোন সাধারণ আরবী নয়। অতি উঁচু ভাষার লালিত্যে এর ব্যঞ্জ দ্যোতনা সত্যিই অসাধারণ। যার অলংকারিক সংযোজন, চমৎকার কারুকাজ, শৈল্পিক শব্দবিন্যাস, সুনিপুণ বক্তব্য, জাদুময় উপস্থাপনা, নান্দনিকতার অপরূপ সত্যিই সাফল্যময় ও শোভামন্ডিত। বিজ্ঞানময় পবিত্র কুরআনের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় কে আছে এর ছেয়ে সুবাগ্মী? যে গতিময় বক্তব্য উপস্থাপন করে কুরআনের ভাষার শব্দ কাঠামো ও বক্তব্যের সমান্তরাল অবস্থানে গিয়ে সামান্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে? কুরআনের ভাষা আরবী। এই আরবী ভাষার বিকল্প নেই। তাই যারা কুরআন ও হাদীসকে অনুধাবন করতে চায় তাদের জন্য আরবী ভাষা শিক্ষা করা অপরিহার্য কর্তব্য।
সারকথা, আরবী বর্ণ, শব্দ, বাক্য, ব্যাকরণ, অলংকার, কথোপকথন, অনুবাদ ইত্যাদি শিক্ষা করলে কুরআন পাঠ করা এবং তার অর্থ অনুধাবন করা সহজ হয়।
View the Original article
0 comments:
Post a Comment