তিনি ছিলেন তাঁর বাবার আদরের সন্তান। বাবা একজন গোত্র প্রধান এবং আগাধ ধন সম্পদের মালিক। তিনি তার সন্তানকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি তার সন্তানের মঙ্গল কামনায় সব সময় সচেষ্ট থাকতেন। একসময় সালমান ফারসির বাবা কি চিন্তা করে তাঁকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে মেয়ে মানুষের মত। তার বাবা কোন ভাবে তাঁর অমঙ্গল হতে পারে এমন আশঙ্কা করেছিলেন। এ কয়েকদিনে মধ্যে সালমান তাঁর বাবা মার মাজুসি ধর্মে বুৎপত্তি অর্জন করেন।
একদিন কোন এক কাজে তাঁর বাবার বাইরে যাওয়া দরকার হল। কিন্তু তিনি অত্যন্ত ব্যেস্ত থেকায় সালমানকে যেতে বললেন। তিনি সেখানে যাবার পথে একদল খ্রিস্টানদের উপাসনালয়ে দেখতে পান। তিনি তাঁদের রীতিনীতি সমূহ অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে দেখতে থাকেন। বাড়ি ফিরে তাঁর বাবাকে ব্যেপারটা সম্পর্কে বলতেই তিনি ক্ষেপে গিয়ে বললেন তাঁর ও তার বাপ-দাদার ধর্মই সেরা। কিন্তু সালমান স্বীকার না করায় তাঁকে বেধে ফেলেন।
একদিন সুযোগ পেয়ে সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শাম দেশে পালিয়ে আসলেন। সেখানে তিনি বিশপের সান্নিধ্যে থাকতে লাগলেন। একটা সময়ে তিনি বুঝতে পারলেন, বিশপ দুশচরিত্রের মানুষ। তিনি মানুষ থেকে দান নিয়ে গরিবদেরকে দেন না। বরং তিনি তা গচ্ছিত করেন। তিনি ব্যেপারটা সবাইকে জানাতেই সবাই সেই বিশপ শূলে চড়িয়ে হত্যা করে নতুন একজন নিষ্ঠাবান লোককে বিশপ বানায়। নতুন বিশপ অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু তিনি খুব তারাতারি মারা গেলেন। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী তিনি অন্য একজন হক মানুষের সন্ধান পেলেন। কিন্তু এই ভালো মানুষটিও বেশী দিন আর থাকলো না।
এরপরে তিনি আরেকজনের সন্ধান দিলেন সালমানকে, সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর কাছে গেলেন আর যথারীতি তিনি খুবি দ্রুত মারা যান। তখন তিনি সালমান কে বলেন যে তাঁর বিশ্বাসের কোন সৎ ব্যেক্তিকে তিনি আর চিনেন না। এই সময়ে তিনি তাঁকে রাসুলুল্লাহর কথা বলেন। তিনি তাঁকে আরবে যেতে বলেন। তিনি আরবের কিছু ব্যেবসায়ির মাধ্যমে আরবে যেতে মনস্থির করেন। বিনিময়ে তিনি তাদেরকে তাঁর কাছে যে সম্পদ ছিল সব দিয়ে দেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকেরা তাঁকে মদিনার একজনের কাছে দাস হিসেবে বেচে দেয়।
এরপর যখন আল্লহর রাসুল মদিনায় আসেন, তখন সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম কবুল করেন এবং রাসুলুল্লাহ এবং মুমিনদের সহায়তায় তিনি দাসত্ব থেকে মুক্তি পান। তিনি বদর আর উহুদ ছাড়া বাকি সকল যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। খন্দকের যুদ্ধে তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁর পরামর্শেই রাসুলুল্লাহ পরীখা খননের কাজ শুরু করেন। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর প্রায় সময়ি নবিজীর সোহবতে থাকতেন। এ জন্য তিনি অত্যন্ত জ্ঞানি হয়ে উঠেন। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, জ্ঞান ও হিকমতের দিক থেকে তিনি লোকমান হাকিমের সমতুল্য। আল্লাহর রাসুলের প্রতি অবিচল আস্থা তাঁকে সৌভাগ্যবান করেছে। তাঁর ইমানের জজবা ছিল অসীম। তিনি আল্লাহর পথে সারাজীবন কঠোর সাধনা করেছেন। তিনি যতদিন এই পৃথিবীতে ছিলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি আর রাসুলের আনুগত্ত্যের উপরে থেকেছেন। ইসলামের ঝাণ্ডা কে তিনি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সারা দুনিয়াময়। তাঁর সমস্ত চেষ্টা সাধনা ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা। তিনি তাঁর জীবনাতিপাত করেছেন ইসলামের দ্যুতিকে লোক-লোকান্তরে বিস্তৃত করে দিতে। আল্লাহ তাঁকে অবশ্যই তাঁর উত্তম জাজা দান করবেন।
View the Original article
0 comments:
Post a Comment