সাধারণ ভাবে মাদক অর্থ নেশার বস্তু। যে সমস্ত বস্তু গ্রহনের ফলে আমাদের স্বাভাবিক চেতনা লোপ পায় এবং আমরা ধীরে ধীরে সেই বস্তুর প্রতি আসক্ত হয়ে পরি তাকে মাদক বলে। মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা জানা সত্ত্বেও এর ব্যবহার নতুন কোন ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ আজ এমন একটি দেশ যেখানে মাদক আজ খাদ্য দ্রব্যের চেয়েও বেশি সহজলভ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর ব্যাবহার ও সহজলভ্যতা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। প্রচলিত মাদকদ্রব্য গুলোর মাঝে গাজা, ফেনসিডিল, হেরইন, ইয়াবা, মদ আজ বহুল প্রচলিত। বিশেষত ফেনসিডিল এর সহজলভ্যতা ও এর নেশা আসক্তি বেশি হওয়ার কারণে এর প্রতি আসক্তি বেশি দেখা যায়।
ফেনসিডিল একটি কাশের ওষুধ ছিল যা মূলতঃ ভারত থেকে আমদানি করা হত। কিন্তু পরবর্তীতে এটি নেশা দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার শুরু করার পর থেকে ১৯৮২ সালে এতির আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯০ সালের পর হতে ব্যাপক হারে অবৈধ ভাবে ফেনসিডিল ভারত থেকে আমদানি করা হতে থাকে এবং ব্যাপক হারে নেশা দ্রব্য হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়। এটি শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং ভারত, মায়ানমার ও নেপাল এও নেশা দ্রব্য হিসেবে ব্যাবহৄত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩,২৫,৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে।
মে এন্ড বেকার লিমিটেড নামক একটি কোম্পানি আগে ভারতে ফেনসিডিল উৎপাদন করত। পরবর্তীতে এই কোম্পানির নাম ১৯৯০ সালে পরিবর্তন করা হয় এবং নতুন নাম রাখা হয় রোন পোলেংক লিঃ। ২০০০ সালে নিকোলাস পিরামল লিমিটেড নামক একটি নতুন কোম্পানি রোন পোলেংক লিঃ এর সাথে যুক্ত হয়ে ফেনসিডিল উৎপাদন শুরু করে। এই কোম্পানির সর্বাধিক উৎপাদিত ও বিক্রিত ওষুধ হচ্ছে ফেনসিডিল।
ওষুধ হিসেবে যে ফেনসিডিল উৎপাদন করা হয় তাতে সাধারনতঃ ৫% কোডেইন থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে রপ্তানি(পাচার) এর উদ্দেশ্যে উৎপাদিত ফেনসিডিল এ প্রায় ২০% কোডেইন খুজে পাওয়া যায়। ভারতের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ২০০৫ সালে এই ব্যাপারটি নিয়ে নিকোলাস পিরামল রোন পোলেংক লিমিটেড কোম্পানির সেলস ম্যানেজার এর বিরুদ্ধে ভারতীয় আদালতে একটি মামলা করে। কিন্তু কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ভারতের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী মানুষ বলে খুব একটা লাভ হয়নি।
বর্তমানে ফেনসিডিল এর দাম বেশি ও এটি খুব বেশি সহজলভ্য না হওয়ার কারণে মাদকাসক্ত ব্যাক্তিরা অন্যান্য কাশির সিরাপ ব্যাবহার করা শুরু করেছে। তন্মদ্ধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অফকফ নামক সিরাপটি। এটির মূল্য মাত্র ৫০ টাকা এবং এটি যেকোনো ওষুধের দোকানেই পাওয়া যায়। এছাড়াও আরও কিছু কাশির সিরাপ মাদকদ্রব্য হিসেবে সেবন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহল যদি এখনি সছেতন না হয় তবে হয়ত একদিন এগুলোও ফেনসিডিল এর মত রূপ ধারন করবে।
আর একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তি তার পরিবার এবং পুরো সমাজের জন্য অভিশাপ স্বরূপ। কারণ মাদক গ্রহনের জন্য যে টাকা প্রয়োজন হয় তা যোগার করার জন্য একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তি যে কোন অপরাধ করতেও পিছপা হয়না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের প্রায় ৮৫% মাদকাসক্ত ব্যাক্তি কোন না কোন অপরাধের সাথে যুক্ত। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে আমাদের মাদকের সহজলভ্যতা কে দূর করতে হবে।
আমাদের বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ হিসেবে মাদকদ্রব্য ব্যাবহার আমাদের সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এর প্রয়োগ বাস্তবিকভাবে করা না হলে মাদকদ্রব্য ব্যাবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের পুলিশ ও প্রশাসন যদি সঠিক ভাবে মাদকদ্রব্য ব্যাবহারকারী ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করে তবে হয়ত শুধু ফেনসিডিল নয় এর মত সকল মাদকদ্রব্যের ব্যাবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এবং পারিবারিক ভাবে মাদক মুক্ত থাকার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
View the Original article
0 comments:
Post a Comment