ইমাম বুখারির মতে জাহেলি যুগে আব্দুর রাহমান এর নাম ছিল আবদু আমর। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর আল্লহর রাসুল তাঁর নাম রাখেন আব্দুর রহমান। তিনি জুহরা গোত্রের লোক ছিলেন। তাঁর মাতার নাম শিফা বিনতে আউফ। তাঁর দাদা ও নানা উভয়ের নাম ছিল আউফ। তাঁর জন্ম সাল নিয়ে বিস্তর মত পার্থক্য রয়েছে। ইবনে হাজার আসকালানির ভাষায় তিনি রাসুলের চেয়ে ১৩ বছরের ছোট। তবে ওয়াকিদের সুত্রে ইবনে সাদ বর্ণনা করেন, তিনি আমুল ফীলের ১০ বছর পর অর্থাৎ ৫৮০তে জন্ম নেন।
তিনি ইসলামের প্রথম দিকেই ঈমান গ্রহণ করেন। তিনি হজরত আবু বকরের(রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। তিনি হজরত আবু বকরের আহবানেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হজরত আবু বকরের ঘরে নিয়মিত বৈঠক করতেন। তখন আবু বকরের ঘরে বৈঠক করতেন যারা তাঁদের মধ্যে ছিল হজরত উসমান, জুবাইর, তালহা, সাদ এবং আব্দুর রহমান। তাঁরা বসে দ্বীনই আলোচনা করতেন। এবং ইসলামকে কিভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা যায় এবং তাউহিদের ঝাণ্ডাকে কিভাবে বিশ্বের বুকে উঁচু করে ধরা যায়, সে আলোচনাই করতেন তাঁরা।
তিনি ছিলেন সাহিবুল হিজরাতাইন। তাঁদেরকেই সাহিবুল হিজরাতাইন বলা হয়, যারা হাবসা এবং মদিনা উভয় জায়গায় হিজরত করেন। যখন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদিনায় হিজরত করেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম তাঁর সাথে সাদ ইবনে রাবি আল খাঁজরাজির সাথে ভাত্রিত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আব্দুর রহমান ইবনে আউফকে বলেন, তিনি আনসারদের মধ্যে একজন সম্পদশালী লোক। তিনি তাঁর সমুদয় সম্পদ দু ভাগে ভাগ করে দিতে চান। এমনকি তিনি আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তাঁর দুজন স্ত্রীর মাঝে তাঁর যাকে সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে তাঁকে বিয়ে করে নিতে। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা) তাঁর (সাদ) উদারতায় মুগ্ধ হন এবং বিনয়ের সাথে তাঁকে বলেন, আমাকে বাজারের রাস্তা চিনিয়ে দিন। তখন থেকে তিনি ব্যাবসা শুরু করেন। হজরত সাদ যে উদারতা দেখিয়েছিলেন তাঁর দ্বীনই ভাইয়ের প্রতি, সেটা ছিল মুসলিম ভাত্রিত্যের একটি অনন্য উদাহরন। মুলত এমন ভাত্রিত্যের শক্তিতেই ইসলাম বিশ্ব জয় করেছিল একদিন।
হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলামের প্রতিটি জিহাদে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বদর যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। উহুদের যুদ্ধে তিনি প্রাণ-পন জিহাদ করেন। তিনি সমস্ত শরিরে ৩১তা আঘাত প্রাপ্ত হন। তাবুকের যুদ্ধে তিনি আট হাজার দিনার রাসুলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম) হাতে তুলে দেন। রাসুল তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করেন ঘরে কি রেখে এসেছ? তিনি উত্তর দেন, আমি যা দান করেছি, তাঁর থেকেও উত্তম ও উৎকৃষ্ট জিনিস রেখে এসেছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেন কত? তিনি উত্তর দেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যেই রিজিক, কল্যাণের অঙ্গিকার করেছেন, তাই রেখে এসেছি। এমনি ছিল তাঁর ইমানের দৃঢ়তা।
তিনি আবু বকরের (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) খেলাফতের সময় তাঁর পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ওমরের খেলাফতের সময়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। হজরত উসমানের খেলাফতের সময়েও তিনি অনেক গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, এবং সেই উসামানের(রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) শাশনামলেই তাঁর ওফাত হয়। আল্লাহ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
View the Original article
0 comments:
Post a Comment