বাংলাদেশে ইসলাম ও এর ইতিহাস

on Friday, June 29, 2012

ইসলাম এর বিস্তার এই উপমহাদেশে অনেক অনেক কাল আগেই ঘটেছে । ১৩০০ শতাব্দির গোঁড়ার দিকে ইন্ডিয়ার উত্তর অঞ্ছলে মোহাম্মাদ ঘুড়ী এর আগমনের সাথে সাথে এই উপমহাদেশে মুসলিম সম্রাজ্যের বিস্তার ঘটে এর সাথে সাথেই ইসলাম এই অঞ্ছলে প্রবেশ করে। এই উপমহাদেশে ইসলাম সম্প্রসারণ এর মূলে আরবদের আগমন প্রধান ভুমিকা পালন করেছে । তবে ইসলাম ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে এই উপমহাদেশে তথা এই দেশে প্রবেশ করেছে । যেমন – মুসলমান ব্যাবসায়ী, তুর্কীদের জয়, এবং মুসলমান সুফি সাধকদের আগমনের মাধ্যমে।  ইরাক থেকে সৈয়দ শাহ্‌ নাসিরুদ্দিন ইসলাম প্রচার এর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আগমন তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য । ব্যাবসায়ীক তথা তৎকালীন জল যোগাযোগ সুবিধার জন্য মূলত চট্রগ্রাম এ ইসলাম এর আবির্ভাব ঘটে। ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলা পাল বংশের শাসনাধীন ছিল তারপর সেন বংশ বাংলার শাসন ভার গ্রহন করে। সেন সম্রাজ্জ্যের পতনের পর বাংলায় ইসলাম এর বিস্তের পুরোপুরি ভাবে শুরু হয় এবং তা প্রায় ১০০ শত বছর যাবত ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করে। এই বিস্তার একক ভাবে নয় বরং দলগত বা গোষ্ঠী গত ভাবে ঘটে। আগেই বলা হয়েছে যে সুফি গণ বাংলায় ইসলাম প্রচারে আগ্রণী ভুমিকা পালন করেছেন। ঈখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজির আমলে বাংলায় তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ব্যাপক ভাবে সম্প্রসারিত হয়। এর মূলে ছিলেন মুসলমান সাধক গণ। হযরত শাহ্‌ জালাল (রাঃ)  তার মামা শেখ কবির এর নির্দেশে বাংলায় আসেন এবং সিলেটের তৎকালীন হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দ কে হারিয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। তার এই আগমন এর মাধ্যমে বাংলায় ইসলাম এর বিস্তার বেশ এগিয়ে যায়।

বাংলাদেশের প্রধান মুসলমান সম্প্রদায় সুন্নি নামে পরিচিত। সুন্নি গণ মূলতঃ হানাফি মাজহাব অনুসরন করেন। তারা তাবলীগ জামায়াত পরিচালনা করেন। বিশ্ব ইস্তেমা তাদেরই পৃষ্টপোষকতায় হয়ে থাকে। এই বিশ্ব ইস্তেমায় প্রায় ৫০ লক্ষ মুসলমান বাংলাদেশ সহ সমস্ত দক্ষিন এশিয়া হতে অংশগ্রহন করেন। বাংলাদেশের অপর একটি উল্লেখযোগ্য মুসলিম সম্প্রদায় হল আহলে হাদিস যারা কোন মাজহাব অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ রুপে কুরআন ও হাদিস মেনে চলে। মুলতঃ রাজশাহী এবং খুলনায় এই সম্প্রদায় এর লোকজন বেশী পাওয়া যায়। সমগ্র বাংলাদেশে এই সম্প্রদায় এর লোক সংখ্যা প্রায় ২৭৫ লক্ষ। বাংলাদেশ এ প্রায় ৬০০ আহলে হাদিস মসজিদ এবং ৫ টি আহলে হাদিস মাদ্রাসা আছে।  আহলে হাদিসদের উল্লেখযোগ্য তিনটি ধারা খুজে পাওয়া যায়। এগুলো হল মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল গালিব পরিচালিত আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ (AHAB), জামীয়াতে আহলে হাদিস এবং আহলে হাদিস তাবলীগ-ঈ-ইসলাম। এছাড়াও আরও দুটো সম্প্রদায় এর দেখা বাংলাদেশ এ পাওয়া যায় যথা- আহমেদিয়া এবং শিয়া। ঢাকা সহ সমগ্র বাংলাদেশ এ প্রায় ১০০,০০০ হাজার আহমেদিয়া মুসলিম এর বসবাস।

যদিও বাংলাদেশে মুসলমানরা সংখ্যা গরিষ্ঠ তথাপিও বাংলাদেশ সংবিধান প্রতিটি মানুষের নিজস্ব ধর্মকে প্রাধান্য দেয়। বিশেষত বাংলাদেশ এর বর্তমান সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংবিধান এ কিছু পরিবরতন আনে যা ধর্ম নিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ এ ধর্ম মন্ত্রণালয় সকল ধর্মের পৃষ্টপোষকতা করে থাকে। এই মন্ত্রণালয় মুসলমানদের সকল মসজিদ, ঈদগাহ এবং ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান এর সময় সম্পর্কে সকলকে অবগত করে ও সুষ্ঠু ভাবে তা পালনে সহায়তা করে। বাংলাদেশ এ মুসলমানরা সার্বিক ভাবে তাদের ধর্ম পালনের সুবিধা ভোগ করে থাকে। মুসলমানদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার বাক্তিগত অর্থায়নে মক্কাতে হাজ্জ পালনের জন্য কাগজপত্র এবং অন্যান্য  ব্যাবস্থা রাষ্ট্রীয় ভাবে করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ এর প্রধান ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল হচ্ছে জামাত-ই-ইসলামী বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং সমগ্র উপমহাদেশের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় ইসলামিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ এর মুক্তিযুদ্ধে এই দলটির বিতর্কিত ভূমিকা আজও বাঙ্গালীদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে।

Related posts:

  1. বাংলাদেশের অপরাধ চিত্র বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক...
  2. দারিদ্র ও বাংলাদেশ – Poverty and Bangladesh ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদশের প্রায় ৩০% মানুষ দারিদ্র সীমার...


View the Original article

0 comments: