২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদশের প্রায় ৩০% মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে দারিদ্র একটি অন্যতম অন্তরায়। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অসম বণ্টন, ধীর গতির অর্থনৈতিক উন্নয়ন সত্ত্বেও ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫-৬% হারে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তথাপিও বাংলাদেশ বর্তমানে একটি জনবহুল, অদক্ষ সরকার দ্বারা পরিচালিত দরিদ্র দেশ যার মাত্র ৪৫% জনসংখ্যা কৃষির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত।
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সহ ১৯৯০ সাল হতে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রতিবছর মাত্র ১% হারে এই দেশটির দারিদ্র দূরীভূত হচ্ছে। ২০০৫ সালে বিশ্ব ব্যাংক এর একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটির ৪০% লোক দারিদ্রসিমার নীচে বসবাস করে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। হিসাব অনুযায়ী গ্রামে বসবাসকারী লোকসংখ্যা প্রায় মোট জনসংখ্যার ৮০%। এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অধিকাংশ সময় শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যাবস্থা, ও বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্ছিত। ফলশ্রুতিতে গ্রামে বসবাসকারী জনসংখ্যার ২০% সবসময় দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে আসছে এবং তাদের কোন নিজস্ব কৃষি জমি নেই, তারা অন্যের জমিতে কাজ করে জীবনযাপন করে। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ সুবিধার ও যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতি না ঘটলে তাদের উন্নয়নের ও কোন আশা করা যায় না। গ্রাম্য জনগোষ্ঠীর আরও ২৯% অংশ দরিদ্র বলে বিবেচিত হয়। যাদের হয়ত একটুকরো আবাদি কৃষি জমি আছে যা তাদের সেশ সম্বল। হয়ত তদের পূর্বে আলোচিত ২০% এর মত খাদ্য সমস্যা নেই কিন্তু তারা শিক্ষা ও চিকিৎসা বঞ্ছিত হবার কারণে তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায় যা যে কোন দেশের উন্নয়নের অন্তরায়। আর গ্রামের মহিলাদের কথা বলতে গেলে উপন্যাসিক মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর মত বলতে হয় “গরিবের মাঝে তারা আরও গরিব, ছোটলোকের মাঝে আরও ছোটলোক।” তাদের করুণ অবস্থা বোঝানোর জন্য এর চেয়ে ভাল উপমা আর হয়ত হয়না। তারা লিঙ্গ বৈষ্যমের শিকার এবং পারিবারিক উপার্জনে তাদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত। শুধু তাই নয় জাতীয় পর্যায়ে যেমন ভোটাধিকার এর বেলায় তাদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে।
ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার প্রায় ৩৭% মানুষ জাতীয় দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। যদিও বলা হয় বা অবস্থা দৃষ্টে দেখা যায় যে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, চট্রগ্রাম এর মত বড় বড় শহরের মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ উপভোগ করে কিন্তু বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। এখনো এসব শহরে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা খুব কম নয় যারা বর্ষায় বাসস্থান এর অভাব বোধ করে অথবা যাদের চিকিৎসা সেবা নেয়ার সুযোগ খুব কমই ঘটে।
গ্রাম্য মানুষের দারিদ্রের মূল কারণ গুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বন্যা ও খরা, এবং দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য। আর শহরে দারিদ্র অবস্থান করার মূল কারণ গুলোর মধ্যে বেকার সমস্যা, অপর্যাপ্ত বাসস্থান ও পয়ঃনিস্কাসন ব্যাবস্থা উল্লেখযোগ্য।
তবে বর্তমানে দারিদ্র দূরীকরণে দেশের সরকার এর গৃহীত কিছু পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মত পূর্বে থেকেই বাংলাদেশেও প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এই লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী, ও নারীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যাবস্থা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান সরকার এই সকল কর্মসূচীর পরিধি আরও বাড়িয়েছেন। বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ, কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণ এবং বেকারত্ব দূরীকরণে বেকার যুবকদের জন্য কম্পিউটার শিক্ষার ব্যাবস্থা ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেছে। দারিদ্র কোন দেশ থেকে রাতারাতি দূরীভূত করা সম্ভব নয়। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহন প্রয়োজন। এই সরকার এর এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণ এ দেশের দারিদ্র দূরীকরণের শুরু মাত্র।
View the Original article
0 comments:
Post a Comment