বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক গুলি ভয়াবহ সমস্যার মুখোমুখি যেমন – জনসংখ্যা সমস্যা, মাদকাসক্তি, সন্ত্রাসবাদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সমস্যা গুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে অপরাধ প্রবনতা। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের লোকজন আজ অধিক মাত্রায় অপরাধ প্রবণ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি কারন হচ্ছে রাজনীতিতে সন্ত্রাসের ব্যবহার ও মাদকাসক্তি।
কিন্তু সবচেয়ে বড় কারণ হল এদেশের মানুষের দারিদ্র। এদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে অথবা দারিদ্রসিমাতে বসবাস করে ফলশ্রুতিতে তাদের অশিক্ষা ও দারিদ্র তাদের বাধ্য করে অপরাধ করতে। কিন্তু এরা শুধুই দাবার গুটি মাত্র। বড় বড় রুই কাতলাদের টাকার চাহিদা বা ক্ষমতার লিপ্সা মেটানোর জন্য তারা এই সমস্ত গরিব লোকদের ব্যবহার করে মাত্র। এক্ষেত্রে দেখা যায় বেশির ভাগ সময় এ সমস্ত গরিব লোকরাই পুলিশ এর হাতে ধরা পড়ে কিন্তু তবুও অপরাধ বন্ধ হয় না কারণ অপরাধের পেছনের মূল ব্যাক্তিটি সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।
বাংলাদেশে আজ অনেক রকম অপরাধী সংগঠনের দেখা মেলে। যেমন – মাদকদ্রব্য পাচার ও বিক্রয়, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন, কালোবাজারি, মানব পাচার, চোরাচালান ইত্যাদি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সংঘটিত সবচেয়ে বড় অস্ত্র চোরাচালান এর ঘটনাটি ধরা পড়ে ২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল। এটি ধরা পড়ে চট্রগ্রাম এর চট্রগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেড এ। সে সময় বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)। ধারনা করা হয়ে থাকে এতে সরকারের উপরমহলের যোগসাজশ ছিল। কারণ একটি দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা কে পুরোপুরি ফাকি দিয়ে এত অস্ত্র আমদানি কখনো সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বা আইএনসিবি এর মতে বাংলাদেশ হচ্ছে মাদক পাচার এর জন্য এক আদর্শ রুট। আইএনসিবি এর মতে বাংলাদেশের আশেপাশে উৎপাদিত সকল ধরণের মাদক বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে পাচার করা হয়ে থাকে এবং এ সময় এর একটি অংশ এদেশেও বিক্রয় করা হয়। আইএনসিবি এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ইউরোপ থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় হেরোইন পাচারের আদর্শ রাস্তা হল বাংলাদেশ। মায়ানমার, পাকিস্তান, ও ইন্ডিয়া থেকে সড়ক ও নৌপথে প্রধানত এসকল চোরাচালান ঘটে। আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এর মতে এদেশের প্রায় ১00,000 জন এই চোরাচালানের সাথে যুক্ত।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক দল সমূহের পারস্পারিক দলীয় সংঘর্ষের কারণে এবং শক্তি প্রদর্শনের জন্য তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী দল কে প্রশ্রয় দেয় শুধু তাই নয় কখনো কখনো তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এদশের ভবিষ্যৎ যুব ও ছাত্র সমাজের হাতে উঠে আসে অস্ত্র। যা আমাদের মোটেই কাম্য নয়।
এছাড়াও মাদকাসক্তির কারণে আমাদের যুবসমাজ আজ বিপথে চলে যাচ্ছে। মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তি করতে পারেন না এমন কোন কাজ নাই। ঢাকা সহ দেশের সকল স্থানে আজ ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, ধোঁকাবাজি বেড়েই চলেছে শুদুমাত্র মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতার কারণে। আজ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষার চেয়ে বেশি চর্চা হয় অসুস্থ রাজনীতির।
বর্তমানে আর একটি বিষয় অধিক ভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে তা হল খুন। সামান্য কিছু কারণে আজ কাউকে খুন করা যেন একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূলে রয়েছে পুলিশ এর দায়িত্বহীনতা, কর্তব্যে অবহেলা, ও ঘুষ নিয়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেয়ার মত ঘটনা। বাংলাদেশের পুলিশ যদি সম্পূর্ণ রুপে সৎ ও দায়িত্ববান হতে পারে তবুও এই সকল ঘটনা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের যা প্রয়োজন হবে তা হল সৎ ও সুযোগ্য নেতৃত্ব। কারণ পুলিশ সৎ হলেও যদি তাদেরকে উপরমহল থেকে ফোন করে একজন অপরাধীর ব্যাপারে সুপারিশ করা হয় তবে সেক্ষেত্রে পুলিশ বাধ্য হয় তাকে ছেড়ে দিতে কারণ আমাদের দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেতাদের হাতে জিম্মি।
পরিশেষে বলা যায় যে শুধুমাত্র সৎ, শিক্ষিত, সুযোগ্য নেতৃত্ব ও সচেতন জনগণই পারে আমাদের একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিতে।
View the Original article
0 comments:
Post a Comment